প্রিয় শিক্ষার্থী বন্ধুরা, আজকে আমরা আলোচনা করতে যাচ্ছি, মুমিন কাকে বলে ? মুমিনের ১০ টি বৈশিষ্ট্য।
মুমিন অর্থ কি
মুমিন একটি আরবি শব্দ, যা ঈমান শব্দ থেকে এসেছে। মুমিন এর আভিধানিক অর্থ হলো বিশ্বাসী, ঈমানদার, আস্থাজ্ঞাপনকারী ইত্যাদি। এর দ্বারা একজন খাঁটি অনুগত মুসলমানকে বুঝানো হয়, যে দৃঢভাবে ইসলামকে মনে ধারণ করেছে এবং মহান আল্লাহ তায়ালার কাছে নিজেকে পূর্ণরুপে সমর্পণ করেছে।
মুমিন কাকে বলে
সাধারণভাবে বলা যায়, যে ব্যক্তির ঈমান আছে তাকে মুমিন বলা হয়।
ব্যাপক অর্থে, মহান আল্লাহ এবং তাঁর রাসূলের উপর ঈমান আনার পর ইসলামী শরীয়ত মোতাবেক জীবন পরিচালনাকারীকে মুমিন বলা হয়।
ইসলামে যাবতীয় বিষয় এর উপর বিশ্বাস রেখে, যথাযথ নিয়ম অনুযায়ী আমল করে, আল্লাহর নিকট অনুগত্য প্রকাশ করে এবং সুন্নত মোতাবেক জীবন পরিচালনাকারী ব্যক্তিকে মুমিন বলা হয়।
মুমিনের ১০ টি বৈশিষ্ট্য বা মুমিনের গুণাবলী
নিম্নে মুমিনের ১০ টি বৈশিষ্ট্য তুলে ধরা হলোঃ
১। মুমিনগণ জিহাদকারী
ইমানদার ব্যক্তি নিজের জীবন ও সম্পদ দিয়ে আল্লাহর পথে লড়াই করে।
হযরত আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ “রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যে ব্যাক্তি জিহাদ না করে মারা গেল কিংবা তার মনে যুদ্ধের বাসনা জাগলো না, তার মৃত্যু হলো নিফাকের একটি অংশের উপর”।
২। তাওবাকারী
ইমানদারগণ নিজেদের পাপাচার থেকে তাওবা করে। মুমিনের জীবনে একাধিন বার এমন সময় আসতে পারে, যখন সে আল্লাহর সঙ্গে করা তার ইমানি চুক্তির কথা সাময়িকভাবে ভুলে যায়। কিন্তু একজন প্রকৃত ইমানদারের বৈশিষ্ট্য হলো এ সাময়িক ভুলে যাওয়ার হাত থেকে যখনই সে মুক্তি পায় তখনই নিজের গাফিলতির বা ভুলে যাওয়ার পর্দা ছিঁড়ে সে বেরিয়ে আসে এবং তীব্র অনুশোচনা করে আল্লাহর দিকে ফিরে আসে, ক্ষমা চায়।
আনাস (রাঃ) এর হাসিদে বর্ণিতঃ “তিনি বলেন, ‘‘রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ প্রত্যেক আদম সন্তানই পাপী। আর উত্তম পাপী হলো সে ব্যক্তি, যে গুনাহ করে তওবা্ করে। (তিরমিযী, ইবনু মাজাহ, দারিমী)
৩। একনিষ্ঠভাবে আল্লাহর ইবাদতকারী
ইমানদারগণ একনিষ্ঠভাবে আল্লাহর ইবাদত করে। ধারাবাহিক আমল করে ও আনুগত্যের মাধ্যমে সে তার বিশ্বাসের প্রতিফলন ঘটায়।
মহান আল্লাহ তায়ালা বলেনঃ আমি জিন ও মানুষকে কেবল এজন্যই সৃষ্টি করেছি যে, তারা আমার ইবাদাত করবে। ইবাদাত হলো, আল্লাহর একত্ববাদের যাবতীয় বিষয় সমূহকে মান্য করে চলা। অর্থাৎ তাওহীদের যাবতীয় বিষয় সমূহ অন্তরে বিশ্বাস, মুখে স্বীকৃতি এবং কাজে বাস্তবায়ন এই তিনটি কাজের সমন্বয় করার নামই হচ্ছে ইবাদাত।
৪। আল্লাহর প্রশংসাকারী
ইমানদাগণ সুখে-দুঃখে মহান আল্লাহর প্রশংসা করে। হজরত আয়েশা (রা.) হইতে বর্ণিত, সুখ ও আনন্দঘন বিষয়ে রাসুলুল্লাহ (সা.) বলতেন, “আল-হামদুলিল্লাহিল্লাজি বিনিয়মাতিহি তাতিম্মুস সালিহাত”। অর্থাৎ সব প্রশংসা আল্লাহর জন্য। যার মাধ্যমে সকল ভালো কাজ পূর্ণতা লাভ করে। এছাড়াও দুঃখ ও বেদনাময় বিষয়ে তিনি বলতেন, “আল-হামদুলিল্লাহি আলা কুল্লি হাল”। অর্থাৎ “সর্বাবস্থায় আল্লাহর জন্য যাবতীয় প্রশংসা।”(তাফসিরে মুনির)
৫। সিয়াম পালনকারী
মুমিনগণ সিয়াম (রোজা) পালন করে এবং আল্লাহর পথে দেশ-বিদেশে ভ্রমণ করে। –
সিয়াম এমন একটি ইবাদাত যার দ্বারা মহান আল্লাহকে বেশি সন্তুষ্ট করা যায়। সিয়াম পালন দ্বারা আল্লাহকে যত বেশি সন্তুষ্ট করা যায়, অন্য কোন ইবাদাত দ্বারা আল্লাহকে এত বেশি সন্তুষ্ট করা যায় না। তাই মুমিন ব্যক্তি বেশি বেশি সিয়াম পালন করে।
৬। রুকু কারী
মুমিন ব্যক্তি রুকু কারী। মুমিন ব্যক্তি বেশি বেশি সালাতের মাধ্যমে রুকু করে থাকেন। অর্থাৎ মহান আল্লাহর সামনে মাথা ঝুকিয়ে নত হয়।
৭। মুমিনগণ সিজদাকারী
তারা বেশি বেশি সালাতের মাধ্যমে সিজদা করে থাকে। অর্থাৎ আল্লাহর সামনে মাথা নত করে।
৮। মুমিন ব্যক্তিগণ সৎ কাজের আদেশদাতা
মুমিন ব্যক্তি সব সময় সৎ কাজের জন্য আদেশ করে থাকে। যে যেখানে কর্তৃত্বশীল, সে সেখানে তার অধীনস্তদেরকে সৎ কাজের জন্য আদেশ করে। প্রথমত, আমরা সকলেই নিজের উপর কর্তৃত্বশীল। তারপর পরিবারের কর্তা তার পরিবারের সদস্যদের উপর কর্তৃত্বশীল ব্যক্তি। এরকমভাবে রাষ্ট্রীয় পর্যায় পর্যন্ত যে যেখানে কর্তৃত্বশীল থাকে, সে সেখানে সৎ কাজের আদেশ করে থাকে।
৯। অসৎ কাজের নিষেধকারী
মুমিনগণ সৎ কাজের আদেশ করার পাশাপাশি যে কোন অসৎ কাজের নিষেধ করে থাকে। যে যেখানে কর্তৃত্বশীল, সে সেখানে তার অধীনস্তদেরকে অসৎ কাজের নিষেধ করে থাকে।
১০। আল্লাহর নির্ধারিত সীমারেখা হেফাযতকারী
মুমিন ব্যক্তি মহান আল্লাহর সমস্ত আদেশ ও নিষেধ যথাযথভাবে পালন করে। আল্লাহ যা আদেশ করেছেন তা পরিপূর্ণভাবে পালন করতে বিরত থাকে না। অর্থাৎ সকল ফরয বিধান ঠিকভাবে পালন করে থাকে এবং আল্লাহর নিষেধসমূহ থেকে বেচে থাকে মত্ত হয়ে যায় না অর্থাৎ সকল হারাম কর্ম সমূহ বর্জন করে চলে।
আরও পড়ুন