প্রত্যয় কাকে বলে
যে বর্ণ বা বর্ণসমষ্টি শব্দের শেষে যুক্ত হয়ে নতুন শব্দ গঠন করে, সেই বর্ণ বা বর্ণসমষ্টিকে প্রত্যয় বলা হয়। যেমন : (গম + অন) = গমন। এখানে ‘গম’ ধাতুর সাথে ‘অন’ প্রত্যয় যুক্ত হয়ে ‘গমন’ শব্দটি গঠিত হয়েছে। আবার (মিতা + আলি) = মিতালি। এখানে ‘মিতা’ শব্দের সঙ্গে ‘আলি’ প্রত্যয় যুক্ত হওয়ায় ‘মিতালি’ শব্দটি গঠিত হয়েছে।
প্রত্যয়ের শ্রেণিবিভাগ
সাধারণত, প্রত্যয়ের সহায়তায় দুই ধরনের উৎস হতে শব্দ গঠিত হয়। কখনো ধাতু আবার কখনো নাম শব্দের শেষে প্রত্যয় যোগ হয়ে নতুন শব্দ গঠিত হয়। এই দিক থেকে প্রত্যয় দুই প্রকার। যেমনঃ ১। কৃৎ প্রত্যয় ও ২। তদ্ধিত প্রত্যয়।
১. কৃৎপ্রত্যয়
ক্রিয়ামূল বা ধাতুর সঙ্গে যে সব প্রত্যয় যুক্ত হয়ে নতুন শব্দ গঠিত হয় তাকে কৃৎপ্রত্যয় বলে। যেমন– চলন্ত, লিখিত ও জমা শব্দের যথাক্রমে অন্ত, ইত ও আ কৃৎপ্রত্যয়।
২. তদ্ধিত প্রত্যয়
শব্দমূল বা নাম শব্দের সাথে যে সব প্রত্যয় যুক্ত হয়ে নতুন শব্দ তৈরি হয় তাকে বলে তদ্ধিত প্রত্যয়। যেমন– হাতল, মুখর ও ফুলেল শব্দের যথাক্রমে ল, র ও এল তদ্ধিত প্রত্যয়।
প্রত্যয়ের প্রয়োজনীয়তা
বাংলা ভাষায় প্রত্যয়ের প্রয়োজনীয়তা অপরিশীম। প্রত্যয় নতুন শব্দ গঠন করতে সাহায্য করে। শুধুমাত্র মূল ধাতু ও নাম ধাতু দিয়ে ভাষার পূর্ণতা আসে না। শব্দকে সৃজনশীল করতে ও বহুমুখী ভাব প্রকাশক শব্দ গঠন করতে প্রত্যয়ের গুরুত্ব অত্যধিক। প্রত্যয় কখনও ধাতুর পরে, কখনও নাম বাচক শব্দের পরে যুক্ত হয়ে নতুন শব্দ গঠন করে থাকে। যেমন— কর্ ধাতুর বা ক্রিয়ার সাথে ‘আ’-প্রত্যয় যুক্ত করলে তৈরি হয় ‘করা’, আর তার সাথে ‘আনো’-প্রত্যয় যুক্ত করলে হয় ‘করানো’। এ ভাবে প্রত্যয়ের মাধ্যমে ভাষা সমৃদ্ধ হয় এবং পূর্ণতা পায়। তাই প্রত্যয় হল ভাষায় নতুন শব্দ গঠনের জন্য বিজ্ঞানসম্মত কৌশল।
প্রত্যয় ও বিভক্তির মধ্যে পার্থক্য
প্রত্যয় ও বিভক্তির মধ্যে বেশ কিছু পার্থক্য বিদ্যমান রয়েছে। নিম্নে তা তুলে ধরা হলোঃ
প্রত্যয় | বিভক্তি | |
১। | প্রত্যয় হলো বর্ণ বা বর্ণগুচ্ছ শব্দ। | বিভক্তি কোনো পদ রূপে গণ্য হয় না। |
২। | প্রত্যয় ধাতু ও শব্দের পরে (শেষে) যুক্ত হয়ে নতুন শব্দ গঠিত হয়। | বিভক্তি শব্দের সাথে যুক্ত হলে সেটি বাক্যে ব্যবহূত হতে পারে। |
৩। | প্রত্যয় প্রধানত দুই প্রকার হয়ে থাকে। | বিভক্তি প্রধানত সাত প্রকার হয়ে থাকে। |
আরও পড়ুন